কবিতার বাতায়ন
বিমূঢ়
—— বেনজির শিকদার
বহু জন্মান্তর
হাতের তালুতে থুতনি গুঁজে শুয়ে আছি!
আমাকে ঘিরে আছে
একটি সময়খেকো গৃহগোধিকার বেঢপ মুখ;
শুনি বেহাগের আর্তনাদ, অদূরে কফিনের দুখ।
ভাঙছে ফণীমনসার বন—
তৈজসের ঘ্রাণে উড়ছে একজোড়া অন্ধ মধুমক্ষিকা।
মৃত কবিতাদের মাতমে কাঁদছে এক-টব ঘন পর্তুলিকা।
ছুঁয়ে দিতে অধরপল্লব
দিলরুবা-প্রেমে মাঝে মাঝে উঁকি দেয়
একফালি আগুনরঙা ময়ূখমালী ঠোঁট।
হতে চেয়ে বৃষ্টি, এ দৃষ্টি মেঘ হয়ে যায়;
হরণ করে ইচ্ছের দীপাবলি গালিবের মতো
শংকরপ্রবাহে আকণ্ঠ তৃষ্ণা করে পান।
নির্ঘুমরাতে জখমি স্বপ্নগুলো—
ধবল-শশকের মতো ধীরপায়ে হাঁটে
অসিতবর্ণ চোখ দু’খানি যেন এক দুঃখভেজা নর্তকী।
নারীর প্রণয় নয়—
সন্ধ্যার আহ্নিকে ভাসে বিধুর সংলাপ;
ফিরে যায় বেনামি চিঠি, গাঢ় কুয়াশায় ডোবে ডাগর শশধর।
এরপর আরও কিছু দুঃখ মাপতে—
হিজলের হাহাকারে বাটখারা সাজে;
অমিত্রাক্ষরে বাড়ে বেলা, হৃদয়ে নাটমন্দিরের উৎসব।
আমি কেবল—
হাতের তালুতে থুতনি গুঁজে শুয়ে আছি।
লজ্জা ঘুচে না গেলে
—— শাহীন ইবনে দিলওয়ার
সহ্য করার মতো দূর্বোধ্যতা দিও
দিব্যজ্ঞান থাকলে চাইতাম না
দিনান্তে অবোধ বিষয়গুলো নিয়ে
বড়ো লজ্জায় পড়তে হয়
বিষয়গুলো বোধের অগম্য থেকে যায়।
ভেবেছিলাম শক্ত সমর্থ
প্রাচীর ভেঙ্গে পড়বেনা কোনোদিন
আভাস না দিয়ে সামনে ছোরা
হাতে অচেনা লোক দাঁড়িয়ে পড়লো
অথচ কারো ক্ষতি করেছি মনে পড়ে না।
পাশে থেকে চব্বিশ ঘন্টা কোনো
যৌথ ভাষা গড়ে ওঠে না
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখি
তোয়াক্কা না করে চলে যায়
লজ্জা ঘুচে না গেলে জলের অতলে।
মায়া
—— জেবুন্নেছা জোৎস্না
কতোটা বোদ্ধা হলে সহজেই মিশি নিমিষে,
দোষ -প্রদ্যুষে-প্রত্যুষে!
অথচ তুমি ক্রমশঃ দূরে কস্তুরি অবয়বে—
অশরীরি মৃগয়া জোছনায়,
খোলা জানালায় আগন্তুকের
অবাধ যাতায়াতে—
বদলে দাও চেনা দৃশ্যপট:
আশ্বিনের পূর্ণ ডুবু ডুবু চাঁদ-
বাতাসের টানেলে আঁকো
এক অচেনা প্রভাত।
রডোডেন্ড্রনের নীলাভ রহস্য প্রেমে,
আমি তখন ক্রমশঃ জ্বলি একা—
ক্যামোফ্লেক্সের উষ্ণতায়, বদলে যাওয়া
সম্পর্কের মায়াজালে।
সুললিত বাংলা
—— সুমন শামসুদ্দিন
ভুবনমাঝে গর্বিত এক সুললিত ভাষা-
অনুরাগে আঁকা সে সুরে বাংলাতে পায় আশা।
সপ্তরঙের ভাবের বিকাশ এই ভাষাতেই হয়;
সকল স্বরের সেরাধ্বনি বাংলা-ভাষায় রয়।
সাত-মহাদেশ মাটির প’রে বাংলা খুঁজে পাই;
বাংলা ছাড়া মধুর কোনো ভাষা তো আর নাই!
গূঢ়বোধের বাংলা শব্দে আবেগঘন শ্বাস-
বাংলাবর্ণে মিশে আছে চিত্তরাঙা ভাষ!
গদ্য-পদ্য, কাব্যধারায় বাংলা সুতান ধারা;
বাংলাবিহীন প্রেমিক-যুগল রসের বাক্যহারা!
রূপেরাঙা স্রোতস্বিনীর বক্ষে মাঝির গানে;
বাংলারসের সুরে হারাই মনের গাঢ় টানে!
বর্ষা ভাসে জ্যৈষ্ঠ হাসে- শীতে পিঠার গান;
বাংলারসে ষড়ঋতুর গীতিকাব্যেই প্রাণ!
স্বাধীনমুখে জন্ম হাসে বাংলামায়ের কোলে;
জীবন-যাপন, বিদ্যা ভাসে মধুর বাংলা-বোলে।
জন্ম আমার ধন্য কারণ জন্মমাটি বঙ্গে-
সীমারেখা নেই তো কোনো বঙ্গমাটির অঙ্গে।
একুশ আমার অঙ্গে মাখা বাংলা-চাদর গায়ে;
সপ্তসুরের বাংলা হাসে বিশ্বভাষার নায়ে।
গীতি কবিতা
—— সৈয়দ আহমদ জুয়েদ
রৌদ্রের মত ভালবাসি তোমায়
কান পেতে শুনে যাও …
বুকের নদীতে তোমার জন্য
বাধা আছে প্রেমের নাও |
ইচ্ছে হলে পাখা মেলো তুমি
প্রজাপতির মত মনে …
তোমার জন্য সাতটি রং
সাত রঙ্গে খেলা খেলে |
তোমার জন্য আকাশে যখন
ইচ্ছেরা ঘুড়ি উড়ায়…
মগ্নতা আমার দু’ চোখ জুড়ে
ভালবাসা খুঁজে বেড়ায় |
তুমি শুধু তোমার উপমায়
অতুলনীয় এক রাখী…
তোমার জন্য আমার ভেতর
ভালবাসা মাখা মাখি |
বইমেলা হোক আনন্দমেলা
——এবিএম সালেহ উদ্দীন
আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সুপ্রাচীন ইতিহাসের মতো বাংলাদেশের বইমেলারও একটি ইতিহাস আছে ।
তৎকালীন পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্ব থেকেই বাংলাভাষার গুরুত্ব এবং ভাষার স্বাধিকার নিয়ে পক্ষ্যে- বিপক্ষ্যে কথা ওঠে । ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে পূণরায় বাক-বিতন্ডা শুরু হয় । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ অন্যায়ভাবে উর্দ্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । বিশেষকরে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ক্ষোভে, দুঃখে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন । ক্ষোভ ও সংক্ষুব্ধতায় রাজপথ প্রতিবাদমূখর হয়ে ওঠে ।
বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে সমগ্র দেশব্যাপী প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভমিছিল একসময় তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয় ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার স্বাধিকারের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ঢাকার বিশাল বিক্ষোভ মিছিলে পাকিস্তান সরকারের পুলিশের পৈশাচিক হামলা ও গুলিতে আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে এবং ভাষা আন্দোলনের কয়েক সৈনিক শহীদ হন । দেশব্যাপী পাকিস্তান সরকারের ঘৃণিত ও বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং মহান ভাষাশহীদের স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’।
তবে, বইমেলা আর অন্যান্য মেলার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে । প্রতিটি মেলা যেমন আমাদের জাতিসত্তার একটি জাগরণী উৎসব । তেমনই মহান ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিধৌত ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনাবলীর পথ ধরে বাংলাদেশে বইমেলা একটি জাতীয় মেলা । যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনাশিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও জাগরণের সৃষ্টি হয় ।
সরকারি-বেসরকারি বইমেলার আয়োজনের মধ্যদিয়ে সৃজনশীল বই বিক্রির নেটওয়ার্ক ও পাঠক বৃদ্ধির দিকটি বেগবান হয়েছে।
আগেই উল্লেখ করেছি যে,বাংলাদেশের বইমেলার সুপ্রাচীন ইতিহাস আছে । স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমীতে সাত দিনব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । সেখানে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার কিংবদন্তী প্রকাশক বাবু চিত্তরন্জন সাহা বাংলা একাডেমি ( বর্ধমান হাউজ ) প্রাঙ্গনে ছালার চট বিছিয়ে চিত্তরঞ্জন সাহা তাঁর প্রকাশনার কয়েকটি বই নিয়ে বসে যান । বলা যায়, তখন থেকেই অঘোষিতভাবে বইমেলার গোড়াপত্তন হয় ।
প্রকাশ থাকে যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবু চিত্তরন্জন সাহা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ।
কলকাতায় গিয়ে তিনি বাংলাদেশের লেখক-সাহিত্যিকদের সমবেত করেন এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাবলী তুলে ধরেন । তিনি তাঁদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি করার অনুরোধ করেন । তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান-এর সম্পাদনায় ,রক্তাক্ত বাংলা ,নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। সেই গ্রন্থে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, আনিসুজ্জামান, জহির রায়হান, সৈয়দ আলী আহসান, শওকত ওসমান,আহমদ ছফা এবং আব্দুল গাফফার চৌধুরীসহ অনেকের লেখা সন্নিবেশিত হয় । বইটির মুখবন্ধ লিখেছিলন অধ্যাপক আজিজুর রহমান মল্লিক ।
দেশ স্বাধীনের পর চিত্তরন্জন সাহা সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ‘মুক্তধারা’-র প্রতিষ্ঠা করেন । সর্বপ্রথম মুক্তধারার মাধ্যমে সেসময় কলকাতায় অবস্থানরত বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকদের ৩২টি গ্রন্থ প্রকাশ করেন । অতঃপর ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি এবং পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে বইমেলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত মুক্তধারা’র সঙ্গে যোগ দেয় ’নওরোজ কিতাবিস্তান’, ’খান অ্যান্ড ব্রাদার্স’ এবং চট্টগ্রামের ’বইঘর’ নামক প্রকাশনা সংস্থা ।
১৯৭৬ চিত্তরন্জন সাহার সঙ্গে অন্যান্য প্রকাশকগণও অণুপ্রাণিত হন । ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক জ, আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে বইমেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন । ১৯৭৯ সালে বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি । ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালীন সময় বাংলা একাডেমিতে প্রথম “অমর একুশে গ্রন্থমেলা”র আয়োজন করা হয় ।
বর্তমানে বাংলাদেশে অমর একুশে বইমেলা জাতীয় মেলা । আমাদের জাতিসত্তার একটি জাগরণী উৎসব । যেখানে মহান ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিধৌত ইতিহাসের অবিস্মরণীয় ঘটনাবলীর বইমেলা বাংলাদেশে বইমেলা একটি জাতীয় মেলা। বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনাশিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও জাগরণের পেছনেও বইমেলার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি বইমেলার আয়োজনের মধ্য দিয়ে সৃজনশীল বই বিক্রির নেটওয়ার্ক ও পাঠক বৃদ্ধির দিকটি বেগবান হয়েছে।
নিউইয়র্কে প্রথম বইমেলার যাত্রা শুরু হয় নিউইয়র্ক মুক্তধারা’র কর্ণধার বিশ্বজিৎ সাহার মাধ্যমে । ৩২ বছর পূর্ব থেকে হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে যাওয়া নিউইয়র্ক বইমেলা বহির্বিশ্বের একটি বৃহৎ বইমেলায় রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও নিউইয়র্ক বইমেলার সুনাম রয়েছে ।
বইমেলা নিয়ে আমার জীবনের উচ্ছ্বাস ও অনেক স্মৃতিকথা ইতিপূর্বেকার বেশ কিছু লেখায় উল্লেখ করেছি । বইমেলা বাঙালি জীবনের এক প্রত্যাশিত ও কাঙ্খিত উৎসব । যেখানে থাকে শুধু বই, আর বইয়ের সমারোহ। বইমেলা মূলতঃ বইপ্রেমীদের আনন্দমেলা । অগ্রসর পাঠকের কাছে বই সবচেয়ে প্রিয় । বইমেলা লেখক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের একটি সমন্বিত মিলনমেলা । সকলের অংশগ্রহনের ফলেই বইমেলাকে আনন্দমেলা ভাবতে আমার খুব ভালো লাগে । বই আনন্দের প্রতীক । বই কারো শত্রু নয় । বই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত বন্ধু । বইকে ভালোবাসতে হবে। চার্লস ল্যাম্ব বলেছেন—‘যে বই পড়তে ভালোবাসে, তার শত্রু কম।’ মুগ্ধ পাঠকের কাছে বই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের খোরাক। বই এবং পড়া নিয়ে পবিত্র কুরআনের প্রথম নির্দেশনা হচ্ছে ‘পড়ো’। অর্থাৎ ‘যা সত্য তা পড়ো’ । জীবনকে আলোকিত করে তোল । মানবকল্যাণের জন্য বই পড়ো । জ্ঞানের দুয়ার খুলে যাবে ।
বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক নর্মান মেলর বলেছেন, ‘আমি চাই বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।’
বাংলাদেশে একসময় ক্ষুদ্র পরিসর নিয়ে (দীনহীনভাবে) বইমেলার যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাংলা ভাষার জাগরণ এবং বাংলা সাহিত্যের বিকাশে বইমেলা হচ্ছে আমাদের জাতিসত্তার একটি অনিবার্য মাইলফলক । আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন এবং ভাষাশহীদদের চরম ত্যাগের মহিমাকে সমুজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় করে রাখার দৃপ্ত প্রত্যয়ে প্রতিবছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমান প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের যুগে বইমেলায় ব্যাপ্তিতে সৃজনশীল প্রকাশনার ব্যাপক উপস্থিতি ও প্রদর্শন বিস্ময়কর । বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্তে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ ও বাঙালির জাতিসত্তা ও বৈশিষ্ট্যের অনন্য পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে । বইপড়া ও গ্রন্থপাঠের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি হচ্ছে । সর্বত্র বইয়ের জোয়ারের পাশাপাশি বইয়ের পাঠক সংখ্যা কেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তা কিন্তু বলা মুশকিল । সেজন্য বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম ।
বাংলাদেশের মতো নিউইয়র্ক বইমেলার সার্থকতা হচ্ছে,বাংলাদেশ ও কলকাতার স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিসেবী এবং প্রকাশকদের অংশগ্রহণ। বইমেলায় বইয়ের সমারোহের পাশাপাশি বাড়তি অনুষ্ঠানমালার অলংকরণসমূহ প্রবাসের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সবার আনন্দের জোগান দেয়। বইমেলায় কেউ আসেন ঘুরতে, সময় কাটাতে । কেউ আসেন কেনাকাটা করতে। কেউ আসেন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে । আবার কেউ আসেন বই দেখতে এবং পছন্দের বইটি কিনে নিতে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে বইমেলা আনন্দ এবং উৎসবের হাটবাজার। ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত নিউইয়র্ক বইমেলাকে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব হিসেবেও ইতিমধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ।
কবিতা আবৃত্তি, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, চিত্রাঙ্কন ও চিত্র প্রদর্শনী, শিশুদের নৃত্য, নাটক ও গানসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির মধ্যদিয়ে এবারের বইমেলা আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক । বই হোক নিত্যসঙ্গী । বইমেলা হোক আনন্দমেলা।
——লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক