২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল মেয়েদের বয়সভিত্তিক সাফ। ঢাকার মাঠে সেই টুর্নামেন্টের প্রথম চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। এরপর অনূর্ধ্ব-১৮ থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের প্রথম শিরোপার মুকুটও পরেছিলেন মারিয়া মান্দারা।
বয়সভিত্তিক ফুটবলের ধাপ পেরিয়ে মারিয়াদের মূল দল চলে যাওয়ায় দেশকে নেতৃত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। জামশেদপুরে অনূর্ধ্ব-১৮ শিরোপা হারানো এই প্লে-মেকার দেশকে অনূর্ধ্ব-২০ সাফের প্রথম আসরে বাংলাদেশকে শিরোপা জেতাতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে ছিল একটা দ্বিধা। এক বছর আগে জামশেদপুরে শিরোপা হারানোর যন্ত্রণায় দগ্ধ শামসুন্নাহার জ্বলে উঠলেন ঘরের মাঠে। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব তো দিয়েছেনই, দলকে এনে দিলেন আরেকটি শিরোপাও। অনূর্ধ্ব-১৫, ১৮, ১৯ সাফের পর অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টের প্রথম শিরোপাও এল বাংলাদেশের ঘরে।
৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে মূল ও বয়সভিত্তিক মিলিয়ে সব রকম সাফ টুর্নামেন্ট জয়ের চক্র পূরণ হলো বাংলাদেশের। ফাইনালের তিনটি গোলই এসেছে ভিন্ন তিন ফুটবলারের পা থেকে। অধিনায়ক শামসুন্নাহার, শাহেদা আক্তার রিপার পর গোল করেছেন উন্নতি খাতুনও।
চোট থাকায় ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে বিশ্রাম পেয়েছিলেন সোহাগী কিসকু ও মাহফুজা খাতুন। তিন দিনের বিশ্রাম শেষে ফাইনালের একাদশে ফেরেন দুজনই। একাদশের বাইরে আইরিন খাতুন ও উন্নতি খাতুন।
খেলা শুরুর দ্বিতীয় মিনিটেই এসেছিল গোলের সুযোগ। নেপালি গোলরক্ষক কবিতা বি. কে বল বিপদমুক্ত করতে না পারায় উন্মুক্ত পোস্টে শট নিয়েছিলেন আকলিমা খাতুন। তবে নেপালের ভাগ্য ভালো, শট লক্ষ্যে থাকেনি।
১৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন আকলিমা খাতুন। বক্সের ভেতর দুবার শট নিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফরোয়ার্ড। প্রথম শট নেপালি খেলোয়াড়ের গায়ে প্রতিহত হলে ফিরতি বলে আবারও শট নেন আকলিমা। এবারের শট ঠেকিয়ে দেন নেপাল গোলরক্ষক কবিতা।
৩৬ মিনিটে প্রথম সুযোগ নষ্ট করে নেপালও। মমতা পুনের ক্রস থেকে বক্সের ভেতরে আমিশা কারকির শট পোস্ট ঘেঁষে অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
দুই মিনিট পর সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি বাংলাদেশও। বক্সের মুখ থেকে শাহেদা আক্তার রিপার বাঁকানো শট খুঁজে পায়নি জাল। কাছেই ছিলেন শামসুন্নাহার। বলের নাগাল পাননি তিনিও।
তবে ৪২ মিনিটে ব্যর্থ হননি রিপা। তার দারুণ এক শটে ফাইনালে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বক্সের মুখে আকলিমা বল নিয়ে ঢুকে পড়লেও নেপালি রক্ষণের বাধায় নিতে পারেননি শট। বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো রিপার পায়ে বল ঠেলে দেন কুমারী তামাং। রিপা এবার সুযোগ নষ্ট করেননি, ঠিক আগেরবারের মতো হালকা বাঁকানো শটে বল পাঠান জালে।
প্রথমার্ধের যোগ করা প্রথম মিনিটে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে দেন অধিনায়ক শামসুন্নাহার। নিজেদের অর্ধ থেকে আফিদা খন্দকার বল বাড়ান নেপালি রক্ষণের ওপর দিয়ে। বল পেয়েই নিজের সহজজাত ক্ষিপ্রতায় গায়ে লেগে থাকা দুই নেপালি ডিফেন্ডারকে হার মানান শামসুন্নাহার। সামনে এগিয়ে এসেছিলেন নেপালি গোলরক্ষক। তাকে হারিয়েই বল জালে ঠেলে টুর্নামেন্টে নিজের পঞ্চম গোল তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শিরোপা জিততে এই দুই গোল হলেই চলত। তবে বদলি হিসেবে নামা উন্নতি চাইলেন ফাইনালে গোলখাতায় নাম লেখাতে। ৮৭ মিনিটে শাহেদা আক্তার রিপার দারুণ এক ফ্রি-কিক থেকে আলতো টোকায় বল জালে জড়িয়ে লাল-সবুজদের শিরোপা নিশ্চিত করেন এই ফরোয়ার্ড।