কভিড-১৯ মহামারীর আগে ও পরে বিশ্বের বিভিন্ন খাত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। চিপ সংকট, সরবরাহ চেইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, চীনের কারখানাগুলোয় লকডাউন ও বিক্ষোভ বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিক্রি কমার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণে আগামী কয়েক মাস ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি আরো কর্মী ছাঁটাই করবে টেক জায়ান্টরা। আয়ও কমবে প্রতিষ্ঠানগুলোর। খবর রয়টার্স।
মহামারীর সময় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো যে লাভের মুখ দেখেছিল বর্তমানে সেখানে ভাটা পড়বে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষক ও গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি প্রযুক্তি জায়ান্টের প্রতিটিই অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত কম মুনাফা অর্জন করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কেননা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদহারের ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ করছে। এদের মধ্যে ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা ও অ্যামাজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষকরা চলতি বছর মেটা, অ্যামাজন, অ্যাপল, অ্যালফাবেট ও মাইক্রোসফটের মুনাফা লাভের পূর্বাভাস কমিয়েছেন। অক্টোবরের তুলনায় জানুয়ারিতে মুনাফার হার ৫ শতাংশ কমিয়ে ৫৬ হাজার ১৪০ কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফ্যাক্টসেট ডাটার তথ্যানুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর মিনসের জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ৫০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো বড় ধরনের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের আয় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আয়রনহোল্ড ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ সিংঘাই বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি কোনো ইতিবাচক সংবাদের আশা করছি না। অন্তত পরের তিন মাস তো নয়ই। আমার ধারণা, এ খাতে আরো কর্মী ছাঁটাই হবে।’
২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম মুনাফা লাভের পথে রয়েছে অ্যামাজন। আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি আয় ৩৮ শতাংশ কমার কথা জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৮ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ কমানোর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলেও সূত্রে জানা গেছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় চাহিদা বাড়ায় অতিরিক্ত নিয়োগ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
২০২২ সালের নভেম্বরে ১১ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেটা। সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৪২ শতাংশ কমবে। টানা পাঁচ প্রান্তিক ধরে মুনাফায় বড় ধরনের পতনের মুখে রয়েছে জায়ান্টটি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ৭ শতাংশ রাজস্ব হারাবে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ৪৫ শতাংশ ও ২০২১ সালে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী বাড়িয়েছে। এদিক থেকে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দিয়েছে কুপারটিনোভিত্তিক অ্যাপল।
ওয়েডবুশের বিশ্লেষক ড্যান ইভস বলেন, প্রযুক্তি খাতে আরো ৫-১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কেননা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ১৯৮০ সালের রকস্টারদের মতো অর্থ ব্যয় করছে। ১৮ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট জানায়, প্রতিষ্ঠানটি আরো ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা ভাবছে, যা মোট কর্মীর ৫ শতাংশকে প্রভাবিত করবে। বিশ্লেষকদের আশা, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব লাভ করবে। তবে গত ২৪ প্রান্তিকের হিসাবে এটি খুবই ধীর। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি ৯ শতাংশ মুনাফা হারাবে।
চীনে কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর কারণে সেখানে আইফোন উৎপাদনকারী ফক্সকনের কারখানায় কর্মী বিক্ষোভ বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ প্রান্তিকের হিসাবে প্রথমবারের মতো অ্যাপল কম রাজস্ব পাবে।