সিলেটে বন্যার পরিস্থিতির অবনতি ও অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আগামীকাল ভোটারদের দুর্ভোগের আশঙ্কা

জুমাস ডেস্ক: আগামীকাল বুধবার (২১ জুন) সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) নির্বাচন। গত মধ্যরাত ১২টার পর থেকেই প্রার্থীদের সভা-সমাবেশ, নির্বাচনী গণসংযোগ, শোভাযাত্রা, মিছিল-মিটিং শেষ হয়েছে।
এদিকে মুষলধারে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে ফলে নগরীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন নদ-নদীর পানি এখন বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

টানা ভারী বৃষ্টি বর্ষণ ও বন্যার আশঙ্কার কারণে আগামীকাল সিলেটের ভোটের আমেজ বিলীন হয়ে যাওয়ার প্রবনতা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে এক বিশেষ সুত্রে জানাগেছে।

এ টানা অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরির্বতন হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এ নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র পদপ্রার্থী জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ এর মনোনীত প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে।
এ দিকে কাউন্সিলর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারনা করা যাচ্ছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে চূড়ান্ত লড়াইয়ে মোট ৮ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আর কাউন্সিলর পদে ৩৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭২ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন।

সিলেটে সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের মোট ভোটকেন্দ্র ১৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে করা হয়েছে। ১৪ জুন নগরীর বর্ধিত হওয়া ৩৫নং ওয়ার্ডের সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (ভোটকেন্দ্র) টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানি উঠে যায় এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যদিও ঔ পানি নেমে গেছে।

নগরীতে বর্ধিত আরও অনেক ওয়ার্ডের রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতি ভারি বৃষ্টিতে আবারও পানি উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সিলেট নগরীর অনেক বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় আছে।

সিলেট সিটির কর্পোরেশনের (সিসিক) ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগই নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বৃষ্টির পানি উঠার আশঙ্কা বেশি দেখা দিয়েছে। এ দিকে নগরীর বর্ধিত এই ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটের আমেজ অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় অনেক বেশি। প্রথমবারের মতো ঐ এলাকার ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের কাউন্সিলর। এ দিকে কয়েক দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে এসব এলাকাতেই সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ম্লান করেছে ভোটের আমেজ ফলে এর সাথে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বর্ধিত নগরীর ৩৮ নং ওয়ার্ডের নয়া খুরুমখলা, পীরপুর, তালুকদারপাড়া, মইয়ারচর, টুকের গাঁও ও গৌরীপুর এলাকার অনেক ভোটার বলেন, ‌‌‘আমরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সিটি কর্পোরেশনের বিগত দিনে আমরা সব ধরনের কর পরিশোধ করতেছি ফলে বিনিময়ে এই এলাকাগুলোর তুলনামূলক উন্নয়ন হয়নি। এবার সুযোগ এসেছে আমাদের পছন্দের প্রার্থী কাউন্সিলর নির্বাচিত করে এই অবহেলিত অঞ্চল আলোকিত করার। কিন্তু কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারনে চরম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ফলে ভোট দেওয়া নিয়েও শঙ্কা কাজ করছে সব ভোটারদের মনে।

এমন পরিস্থিতিতে যেসব ভোটকেন্দ্রে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সেসব কেন্দ্র পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সুুবিধাজনক কেন্দ্র বাছাইয়ে অগ্রাধিকার থাকবে বলে এ তথ্য একটি সুত্র জানিয়েছে।

সরকারি দল আওয়ামী লীগ সার্বিক পরিস্থিতি কড়াভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তিন আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রতিবেদকের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি ইতিমধ্যেই নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে পানি উঠেছিল এরপরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে গেছে বলে জানাগেছে। আশা করছি এমন পরিস্থিতি ভোটের দিন থাকবে না। সার্বিক পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশনের সাথে আমরাও পর্যবেক্ষণ করছি।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী বলেন, আগামী ২১ জুন সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আজও সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, গত সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৩ সে.মি। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। ঐ দিন বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড কার হয়েছে ১০.৩১ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সি.মি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমদ বলেন, আমারও বিষয়টি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে যে, যদি কোনো সেন্টারে ভোটের দিন পানি উঠে যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে ইতিমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় অগ্রিম প্রস্তুতি গ্রহণ করতেছি।

-মোহাম্মদ মামুন রশীদ

Loading