লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাতের ময়দান

আজ মঙ্গলবার পবিত্র হজ। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর হবে আরাফাতের ময়দান। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হলো সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করা। 

এবার করোনা-পরবর্তী সর্ব বৃহৎ হজ। আগের তিন বছর সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হয়। আজ হজ পালন করতে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছেন লাখ লাখ মুসলিম। কিছু সময়ের জন্য হলেও এখানে উপস্থিত হওয়া হজের ফরজ বিধান। আরাফাতের ময়দানে সারা দিন অবস্থান করবেন বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ হাজি। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ হাজিদেরও অ্যাম্বুল্যান্সে করে কিছু সময়ের জন্য এখানে নিয়ে আসা হবে।

হাজিদের মুখে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাত্ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো অংশীদার নেই। আমি হাজির।সব প্রশংসা ও অনুগ্রহ শুধুই তোমার। সব রাজত্ব তোমার। 

উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা পড়বেন শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ। এর আগে গতকাল মিনায় অবস্থান করেছেন লাখ লাখ হাজি। তবে এবার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হাজিকে মিনায় না নিয়ে সরাসরি আরাফাতে নেওয়া হচ্ছে।

হাজিরা আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে পড়বেন। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া-মোনাজাতে মগ্ন থাকবেন। সূর্যাস্তের পর সবাই মুজদালিফার উদ্দেশে গমন করবেন। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে রাত্রিযাপন করবেন। মুজদালিফা থেকে তিন জামারার জন্য তাঁরা পাথর সংগ্রহ করবেন। 

পরদিন মিনায় বড় জামারায় গিয়ে পাথর নিক্ষেপ করবেন। এরপর কোরবানি করে মাথার চুল ছোট বা মুণ্ডন করবেন। তখন ইহরামের কাপড় বদলে স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সায়ি (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনা থেকে তাঁরা তিন দিন (বড়, মধ্যম, ছোট) ২১টি করে ৬৩টিসহ মোট ৭০টি পাথর জামারায় নিক্ষেপ করবেন। এরপর মক্কায় বিদায়ি তাওয়াফ করে হজের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।

তিন বছর ধরে করোনা বিধি-নিষেধ থাকায় সবার জন্য পবিত্র হজ পালনের সুযোগ ছিল না। করোনাপূর্ব সময়ের মতো এবার মুসলমানরা পবিত্র হজ পালন করছেন। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, করোনার পর এবারই প্রথম বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৮ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছান। আর সৌদি আরবের ভেতর থেকেও বিপুলসংখ্যক লোক হজ পালন করছেন।

হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হজের স্থানগুলোতে দুই লাখ ৩৮ হাজার নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল বাসামি। হজযাত্রীদের পরিবহন সেবা দিচ্ছে প্রায় ২০ হাজার বাস। আর হাজিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া। অসুস্থ হাজিদের চিকিৎসা দিতে মক্কা, মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অ্যাম্বুল্যান্স ও অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজব্রত পালন করতে এক লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন সৌদি আরব গেছেন। গত ২১ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ৩২৫টি ফ্লাইটে তাঁদের পরিবহন করা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৬ হজযাত্রী মক্কা ও মদিনায় মারা গেছেন। বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট আগামী ২ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে সৌদিতে অবস্থানরত ১০ হাজার ও ২০২১ সালে ৬০ হাজার মুসলমান হজ পালন করেন। ২০২২ সালে করোনা বিধি মেনে বিশ্বের প্রায় ১০ লাখ মুসলমান হজ পালন করেন। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান হজ করেন।

Loading