ঘরের মাঠে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুর জাতীয় নারী ফুটবল দলকে উড়িয়ে দিলেন সাবিনা খাতুনরা। শুক্রবার কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দুই প্রীতি ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে সহজেই হারায় সিঙ্গাপুরকে। বিজয়ী দলের হয়ে ফরোয়ার্ড তহুরা খাতুন দু’টি ও ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকার একটি গোল করেন। ছয় বছর আগে এই সিঙ্গাপুরের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অর্ধযুগ পর এসে আরেকটি ফিফা প্রীতি ম্যাচে একই ব্যবধানে তাদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিল লাল-সবুজরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালে সাফ শিরোপা জেতার পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে এটাই সাবিনাদের প্রথম জয়।
শুক্রবার ম্যাচের শুরু থেকেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে আক্রমনাত্মক উপহার দেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। সাবিনাদের একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন সিঙ্গাপুরের ফুটবলাররা। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে থাকা দল সিঙ্গাপুরকে আগে অচেনা মনে হলেও মাঠের লড়াইয়ে যেন চেনা প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেন সাবিনা-তহুরারা। দুই বছর পর গোলের দেখা পেলেন তহুরা খাতুন। আর চলতি বছরে প্রথম জয়ের মুখও দেখল বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল। গত বছর সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডু থেকে সাফ জিতে আসার পর এ বছর পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে জাতীয় নারী দল। নেপালের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচ সিরিজের দু’টিতেই ড্র (১-১ ও ০-০) করেছিল লাল-সবুজরা। তবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টাইব্রেকারে সাবিনাদের ৪-২ গোলে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে যায় নেপাল।
অন্যদিকে এ বছরের সেপ্টেম্বর চীনে হ্যাংজু এশিয়ান গেমসে জাপানের কাছে ৮-০ ও ভিয়েতনামের বিপক্ষে ৬-১ গোলে হারলেও নেপালের সঙ্গে ১-১ ব্যবধানে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। জাতীয় নারী দলের নিয়মিত কোচ গোলাম রব্বানী ছোটর চলে যাওয়ার পর সাইফুল বারী টিটুর তত্বাবধানে এটিই প্রথম জয় সাবিনাদের। ইনজুরিতে থাকায় দলের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার ছিলেন না এ ম্যাচে। তার অনুপস্থিতিতে আক্রমণভাগের ধার নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। তবে অন্যদের দুর্দান্ত পাসিং, ড্রিবলিং আর গতিতে সেই সংশয় দূর হয়ে যায়। প্রথম মিনিটেই গোল পেতে পারতো স্বাগতিকরা। কিন্তু বক্সে ঢুকে তহুরা খাতুন সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষককে একা পেয়েও দেরি করে ফেলেন শট নিতে। পরে ডিফেন্ডারদের চার্জে শটই নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। হতাশা কেটে যায় মিনিট দুয়েক পরই এবং গোল পায় বাংলাদেশ।
ম্যাচের ৩ মিনিটে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছোট কর্ণার নেওয়ার পর মারিয়া মান্ডার কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে বক্সে লং বল বাড়ান। আফিদা খন্দকারের হেডে বল ক্রসবারের ভেতরের দিকে লেগে গোললাইন পেরিয়ে যায়। রেফারি যাপা আপুহামিলা গোলের বাশি বাজান (১-০)। এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়াতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ১৬ মিনিটে সাবিনার ছোট পাস ধরে পায়ের কারুকার্যে একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে সিঙ্গাপুরের বক্সে ঢুকে পড়েন মারিয়া মান্ডা। শটটা তিনি নিলেও গোল পেতেন। তবে মারিয়ার পাশে থাকা তহুরা দ্রুত টোকায় বল জালে ফেলেন (২-০)। শুরুতেই ম্যাচে চালকের আসনে বসার পর বাংলাদেশ চাপ ধরে রাখে সিঙ্গাপুরের রক্ষণে। ২৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সাবিনা খাতুনের শট। ক্রসবার ঘেরে বাইরে চলে যায়। নইলে বিরতির আগে আরও একটি গোলের দেখা পেতেন স্বাগতিক দর্শকরা।
দুই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরও একটি গোল আদায় করে নেয়। বিরতির পরও আক্রমণের ধারা ধরে রাখেন মনিকা চাকমা-সানজিদা আক্তাররা। যে কারণে ম্যাচের ৬০ মিনিটে তৃতীয় গোলটি পায় বাংলাদেশ। এসময় ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিনের লং পাসের বলে পা চালিয়ে দেন তহুরা খাতুন। বল সিঙ্গাপুরের গোলরক্ষক তান লি বিন বিট্রিসের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ায় (৩-০)। শেষ দিকে একাধিক গোলের সুযোগ পেলেও তা নষ্ট করে স্বাগতিকরা। ফলে শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ প্রীতি ম্যাচটি আগামী সোমবার একই ভেন্যুতে খেলবে বাংলাদেশ দল।