ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচেই শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর আজ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তারা ৪০৮ রানের রেকর্ড স্কোর গড়েছে। জিম্বাবুয়ের ওয়ানডে ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০০৯ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে তারা ৭ উইকেটে ৩৫১ রান তুলেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ভুলটা শুরু করল বল-ব্যাটের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে টসে জিতে তারা স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে পাঠালো ব্যাটিংয়ে! তাও এমন এক জিম্বাবুয়েকে যারা সম্প্রতি ২২ গজের লড়াইয়ে কেবল উড়ছে। গতকাল প্রথমে ব্যাটিং করে বদলি অধিনায়ক শন উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৪০৮ রানের পাহাড় সমান পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিক কাপ্তান খেলেন ১৭৪ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। জবাব দিতে নেমে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিং।
মার্কিন দলটি যখন ৪৫ রানে ৬ ব্যাটারকে হারিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারের মুখে ছিল, তখন লেজের ব্যাটারদের সৌজন্যে সেই লজ্জার হাত থেকে রেহায় পায় তারা। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেকে ১০৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৩০৪ রানের বিশাল জয় পায় জিম্বাবুয়ে। যা রানের হিসেবে তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ এবং ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। এই ম্যাচ জেতার আগেই অবশ্য উইলিয়ামসদের সুপার সিক্স নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুটা অবশ্য ছিল ধীরগতির। চতুর্দশ ওভারে দলীয় স্কোর ৫৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা, আউট হন ইনোসেন্ট কাইয়া। তবে তাদের বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যায় শন উইলিয়ামস ও গাম্বির দ্বিতীয় উইকেট জুটি। এ জুটিতে রান ওঠে ১৩১ বলে ১৬০। উইলিয়ামস মাত্র ৬৫ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ১০১ বলে ১৭৪ রান করে। চলমান বাছাইপর্বে উইলিয়ামসের এটি দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১৫৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে উইলিয়ামসের এটি সর্বোচ্চ ইনিংসও। আগের সর্বোচ্চ অপরাজিত ১২৯, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের হয়ে উইলিয়ামসের চেয়ে বড় ইনিংস আছে মাত্র দুটি। ২০০৯ সালে বুলাওয়ায়োতে বাংলাদেশের বিপক্ষে চার্লস কভেন্ট্রির অপরাজিত ১৯৪ রান জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ। এর দুই মাস পর কেনিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১৭৮ রান করেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসে আজ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান গাম্বির, এই ওপেনার ১০৩ বলে করেন ৭৮ রান। সিকান্দার রাজা করেন ২৭ বলে ৪৮ ও রায়ান বার্ল ১৬ বলে ৪৭। উইলিয়ামস তৃতীয় উইকেট জুটিতে সিকান্দার রাজার সঙ্গে যোগ করেন ৪৫ বলে ৮৮ রান আর বার্লের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৩১ বলে ৮১ রান।
চারশতাধিক রান তাড়া করতে নেমে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই ছিল ব্যাকফুটে। শেষ চার উইকেট জুটিতে তারা ৫৯ রান যোগ করতে না পারলে নির্ঘাত এক লজ্জার রেকর্ডে নাম লেখাত মার্কিনীরা। এই বছরের জানুয়ারিতেই ভারতের বিপক্ষে ৩১৭ রানে পরাজিত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা, যা রানের হিসেবে সর্বোচ্চ হার। অভিষেক পাডেকার ও নশতোষা প্রদীপের যথাক্রমে ২৪ ও ২১ রানের ইনিংসে ভর করে সেই লজ্জা থেকে বাঁচে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এরপরও তাদের দলীয় সংগ্রহ ম্যাচ সেরা উইলিয়ামসের চেয়ে ৭০ কম! বাছাইয়ে শতভাগ জয় পেল, আগেই সুপার সিক্স পর্বের টিকেট নিশ্চিত করেছে জিম্বাবুয়ে।
অন্য দিকে পরশু ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প ছিল না আয়ারল্যান্ডের। বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অল্পতে আটকে রাখতে পারলেন না বোলাররা। রান তাড়ায় ব্যাটসম্যানরা করলেন আরও হতাশ। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে পরশু আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে ১৩৩ রানের বড় জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ৩২৫ রান তাড়ায় দুইশও করতে পারেনি আইরিশরা, থামে ১৯২ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে শেষ হয়ে গেল আইরিশদের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন। ফলে পরপর দুই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হলো আইরিশরা।