জুমাস ডেস্ক: “জিততে হলে গড়তে হতো বিশ্বকাপে রান তাড়ার রেকর্ড। মিচেল মার্শের দেড়শোর্ধো ইনিংসে হেসেখেলেই তা করে ছাড়ল অস্ট্রেলিয়া। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে উড়িয়ে সেমিফাইনালের প্রস্তুতি নিয়ে রাখল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।” গতকাল শনিবার (১১ নভেম্বর) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৪৩তম ম্যাচে ৮ উইকেটে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ৩০৭ রানের লক্ষ্য ৩২ বল হাতে রেখে পূরণ করে প্যাট কামিন্সের দল। বিশ্বকাপে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশ ভরাডুবির বিশ্বকাপে কেবল দুটি জয় পেয়েছে। আসর শেষ করেছে আটে থেকে। রান রেটে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের চেয়ে এগিয়ে তারা। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হয়নি এখনও। প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ডাচরা জয় পেলেই নয়ে নেমে যাবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে ভেসে যাবে ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৩২ বলে ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কায় অপরাজিত ১৭৭ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেছেন মিচেল মার্শ। একাদশে ফেরা স্টিভেন স্মিথ অপরাজিত থাকেন ৬৪ বলে ৬৩ রানে। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি ১৩৫ বলে ১৭৫ রানের। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন একটি করে উইকেট। তিন স্পিনার মিলে ২৫ ওভার বোলিং করে নিতে পারেননি কোনো উইকেট। শেখ মেহেদি হাসান আঁটসাঁট বোলিংয়ে অন্তত রানের গতি কমিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। অকাতরে নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ রান দিয়ে গেছেন। টানা দুই হার দিয়ে আসর শুরু করা অস্ট্রেলিয়া এ নিয়ে জিতল পরের সাত ম্যাচই। দক্ষিণ আফ্রিকার সমান ১৪ পয়েন্ট তাদেরও। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩০৬ রান। ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের শীর্ষ সাত ব্যাটারের প্রত্যেকেই বিশোর্ধো ইনিংস খেললেও ফিফটি পান কেবল হৃদয়। ৭৯ বলে ৫টি চার ও ২ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন হৃদয়। বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম ফিফটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান (৫৭ বলে) নাজমুল হোসেন শান্তর। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেন শান্তই। তাসকিনের বলে ১২ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর বানের জলের মতো রান তোলেন ডেভড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। মিড-অনে ওয়ার্নারকে শান্তর সহজ ক্যাচে পরিণত করে দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ বলে ১২০ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মুস্তাফিজ। ৬১ বলে ৫৩ রান ওয়ার্নারের। ২৩তম ওভারে ১৩২ রানে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের সফলতার গল্প এটুকুই। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। তবে প্রত্যেকেরই আউটের ধরণ ছিল হতাশার। শর্ট বলে তানজিদ হাসানের (৩৪ বলে ৩৬) উইকেটে বিলিয়ে আসার মাধ্যমে দ্বাদশ ওভারে ৭৬ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। লিটন কুমার দাস (৪৫ বলে ৩৬) আউট হন অ্যাডাম জাম্পার বলে লং অনে মার্নাস লাবুশেনকে ক্যাচ প্রাকটিস করিয়ে। শান্ত হন অপ্রয়োজনীয় রানআউট। অধিনায়কের মতোই রানআউট হয়ে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহও (২৮ বলে ৩২)। হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে রানআউট হন তিনি। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে দুটি রানআউটই করেন লাবুশেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলটির হয়ে ভালো শুরু পেয়ে এবারও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম (২৪ বলে ২১)। জাম্পার দ্বিতীয় শিকার হয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই কিপার-ব্যাটার। আসরে জাম্পার এটি ২২তম শিকার। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার এখন এই স্পিনারই। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে শেষ ওভারে ক্যাচ আউট হন মিরাজ (২০ বলে ২৯)। ইনিংসের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে শেষ ওভারে রানআউট হন নাসুম আহমেদ। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ৩ ব্যাটসম্যান হয় রানআউটের শিকার। আগামী বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩০৬/৮ (তানজিদ ৩৬, লিটন ৩৬, শান্ত ৪৫, হৃদয় ৭৪, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মুশফিক ২১, মিরাজ ২৯, নাসুম ৭, মেহেদী ২*, তাসকিন ০*, অতিরিক্ত ২৪;
বোলিং: হ্যাজেলউড ৭-১-২১-০, কামিন্স ৮-০-৫৬-০, অ্যাবোট ১০-০-৬১-২, মার্শ ৪-০-৪৮-০, জাম্পা ১০-০-৩২-২, হেড ৬-০-৩৩-০, স্টয়নিস ৫-০-৪৫-১)।
অস্ট্রেলিয়া: ৪৪.৪ ওভারে ৩০৭/২ (হেড ১০, ওয়ার্নার ৫৩, মার্শ ১৭৭*, স্মিথ ৬৩*, অতিরিক্ত ৪;
বোলিং: তাসকিন ১০-০-৬১-১, মেহেদী ৯-০-৩৮-০, নাসুম ১০-০-৮৫-০, মিরাজ ৬-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ৯.৪-১-৭৬-১)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল মার্শ।