জুমাস ডেস্ক: “নাজমুল হোসেন শান্ত আর সাকিব আল হাসান, দুজনেই আউট হলেন সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে। তবে ততক্ষণে জয়ের পথ রচনা হয়ে গেছে দলের। এরপর মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্ব ছিল তুলির শেষ আঁচড়টা দেওয়া। কিন্তু কাজটা করতে পারলেন না মেহেদি হাসান মিরাজও। অনায়াস জয়ের পথ থেকে হঠাৎ ছিটকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত চাপ নিয়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের হাসি হেসেছে বাংলাদেশ।”
গতকাল সোমবার (৬ নভেম্বর) চলমান আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৩ উইকেটে। দিল্লির আরুন জেটলি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে ৩ বল বাকি থাকতে লঙ্কানদের ২৭৯ রানে গুটিয়ে দেয় টাইগাররা। জবাবে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে ৫৩ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপে পঞ্চম সাক্ষাতে এসে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এই জয়ে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনাও বেঁচে থাকল সাকিব আল হাসানের দলের। ১০১ বলে ১২টি চারে ৯০ রান করেন শান্ত। সাকিব খেলেছেন ৬৫ বলে ১২ চার ও দুই ছক্কায় ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের জুটি ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দেয়। টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। আসরে আট ম্যাচে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয় এটি। বিপরীতে সমান সংখ্যক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার এটি ষষ্ঠ হার। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় সমান পয়েন্ট নিয়েও শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের চেয়ে এগিয়ে সাতে বাংলাদেশ।
৪১ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর পর বাংলাদেশের ২১০ রানে ছিল ২ উইকেট। খুনে মেজাজে তখন ব্যাট করছিলেন সাকিব। শতকের পথে ছিলেন শান্তও। এরপর এক ওভারের ব্যবধানে দুজনই ফেরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের শিকার হয়ে। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ২৬ বলে ৩৮ রানের জুটিও বড় জয়ের আশা জাগায়। শেষ পর্যন্ত দুজনই আউট হন। ২০ রানের ব্যবধানে মিরাজও ফিরলে চাপে পড়ে যায় দল। ২ ছক্কায় চাপ উড়িয়ে দেন হৃদয়। শেষে জয়সূচক রান আসে বিশ্বকাপে অভিষেক হওয়া তানজিম হাসান সাকিবের বাউন্ডারি থেকে। এই ম্যাচেও দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন দিলশান মাদুশানকা। দুটি করে নেন মাহিশ থিকশানা ও ম্যাথিউস। তবে ম্যাচটি হয়ত ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবে ম্যাথিউসের আউটের কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাথিউস হয়েছেন টাইমড আউটের শিকার। শ্রীলঙ্কা বড় সংগ্রহ পায় চারিথ আসালাঙ্কার ব্যাটে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে ১০৫ বলে ১০৮ রান করেন আসালাঙ্কা। এছাড়া ওপেনার পাথুম নিশানকার ৩৬ বলে ৪১ ও সাদিরা সামারাবিক্রমার ৪২ বলে ৪১ রান দলকে বড় সংগ্রহের পথে রাখে। ৯.৩ ওভারে ৫২ রানে ২ উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। তানজিম ৩ উইকেট নিলেও ১০ ওভাতে গুনতে হয় ৮০ রান। ৫৭ রানে ২টি নেন সাকিব আল হাসান।
“ব্যাটে-বলে ণৈপূন্য দেখানোয় ম্যাচসেরাও হয়েছেন সাকিব।” ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ম্যাথিউসের আউট। ব্যাটিং শুরু করার আগে হেলমেট পরতে গিয়ে বেল্ট ছিড়ে যায়। নতুন হেলমেটের অপেক্ষায় ছিলেন সদ্যই উইকেটে আসা ম্যাথিউস। নিয়ম অনুযায়ী নতুন ব্যাটারকে বল ফেস করতে হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। সেটা অতিক্রম করায় বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যাথিউসকে টাইমড আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। এমন অনাকাঙ্খিত আউট মানতে পারেননি ম্যাথিউস। মাঠেই চলে আম্পায়ারের সাথে কয়েকটি কথা কাটাকাটি। মাঠের বাইরে বেরিয়েই হেলমেট ছুড়ে ফেলে দেন এই অলরাউন্ডার।
বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ছির দুর্দান্ত। শরিফুলের করা প্রথম ওভারেই উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফেরেন কুসল পেরেরা। ওভারের শেষ বলটি অফস্টাম্পের অনেক বাইরে করেছিলেন শরিফুল। হাঁকিয়েছিলেন পেরেরা। বল ব্যাটের কানায় লাগে। প্রথম স্লিপে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সুপার ম্যানের মত বামে লাফিয়ে তার মুখের সামনে থেকে এক হাতে ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ বললেও হয়ত বাড়িয়ে বলা হবে না। বোলিংয়ে এসেই দ্বিতীয় উইকেটে ৬৩ বলে ৬১ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। লং অনে কুসল মেন্ডিসের দারুণ ক্যাচ নেন শরিফুল। পরের ওভারে নিশানকাকে ইনসাইড এজ বোল্ড করে দেন বিশ্বকাপে প্রথম খেলতে নামা তানজিম হাসান সাকিব। এরপর সাদিরা আর আসালাঙ্কার চতুর্থ উইকেট জুটি যোগ করে ৬৯ বলে ৬৩ রান। সাদিরাকে স্কয়ার লেগে মাহমুদউল্লাহর সহজ ক্যাচে পরিণত করেন সাকিব। এরপরই ম্যাথিউসের সেই আউট। ম্যাথিউসের টাইমড আউটের ধাক্কা সামলে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নেন আসালাঙ্কা ও ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। ধনাঞ্জয়াকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ৮২ বলে ৭৮ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৩৬ বলে ৩৪ রান ধনাঞ্জয়ার। এর আগেও দুটি ফিফটি জুটি পায় লঙ্কানরা। মাহিশ থিকশানাকে নিয়ে ৪৮ বলে ৪৫ রানের আরেকটি জুটিতে নেতৃত্ব দেন আসালাঙ্কা। শেষ পর্যন্ত এই ব্যাটার ফেরেন ৪৯তম ওভারে তানজিমের বলে বাউন্ডারিতে লিটনের ক্যাচে পরিণত হয়ে। এক বল পরে রাজিথার উইকেটও প্রায় একই কায়দায় পেয়ে যান তানজিম। বাংলাদেশের হয়ে উইকেটের দেখা পাননি কেবল তানকিন আহমেদ। তবে সবচেয়ে কম রান দিয়েছেন তিনিই। ১০ ওভারে রান দেন ৩৯। ইনিংসের একমাত্র মেডেন ওভার তারই। আগামী ১১ নভেম্বর টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। দুই দিন আগে শ্রীলঙ্কা আসরে শেষ ম্যাচ খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৪৯.৩ ওভারে ২৭৯ (নিশানকা ৪১, পেরেরা ৪, মেন্ডিস ১৯, সাদিরা ৪১, আসালাঙ্কা ১০৮, ম্যাথিউস ০, ধনাঞ্জয়া ৩৪, থিকশানা ২২, চামিরা ৪, রাজিথা ০, মাদুশানকা ০*, অতিরিক্ত ৬;
বোলিং: শরিফুল ৯.৩-০-৫২-২, তাসকিন ১০-১-৩৯-০, তানজিম ১০-০-৮০-৩, সাকিব ১০-০-৫৭-২, মিরাজ ১০-০-৪৯-১)।
বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ২৮২/৭ (তানজিদ ৯, লিটন ২৩, শান্ত ৯০, সাকিব ৮২, মাহমুদউল্লাহ ২২, মুশফিক ১০, হৃদয় ১৫*, মিরাজ ৩, তানজিম ৫*, অতিরিক্ত ২৩;
বোলিং: মাদুশানকা ১০-১-৬৯-৩, থিকশানা ৯-০-৪৪-২, রাজিথা ৪-০-৪৭-০, চামিরা ৮-০-৫৪-০, ম্যাথিউস ৭.১-১-৩৫-২, ধনাঞ্জয়া ৩-০-২০-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।