বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৪ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বজয় করেছিল। এবার সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ চারেও উঠতে পারলেন না বাংলাদেশের যুবারা। ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে পাকিস্তানের কাছে ৫ রানে হারতে হয়েছে টাইগার যুবাদের। পাকিস্তানের দেওয়া ১৫৫ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করতে গিয়ে জুনিয়র টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৫০ রানে।
গতকাল শনিবার (৩ জানুয়ারি) আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সের ম্যাচে ৩৮ ওভারে জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৫৬ রান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪০.৪ ওভারে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জবাবে ৩৫.৫ ওভারে ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগার যুবারা।
যুব বিশ্বকাপের সেমিতে যেতে ৩৮ ওভারে ম্যাচ শেষ করতে হতো বাংলাদেশকে। কিন্তু নির্ধারিত সেই ওভার তো বটেই, পুরো ম্যাচটাই বাংলাদেশের জেতা হলো না। বেনোনিতে আজ পাকিস্তানের কাছে হেরেই আকবর আলীদের কীর্তি পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ হারিয়েছে মাহফুজুর রহমানের দল।
খেলার প্রথম ইনিংসে সুপার সিক্সের এক নম্বর গ্রুপের বাঁচামরার লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১৫৫ রানে অলআউট করে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দারুণ বোলিং করে ৪টি করে উইকেট নেন পেসার রোহনাত দৌল্লাহ ও অফ স্পিনার শেখ পারভেজ।
সেমিফাইনালে উঠতে ১৫৬ রানের লক্ষ্যটা যে ৩৮.১ ওভারে ছুঁতে হতো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে। তাহলেই পাকিস্তানকে টপকে ভারতের পর গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চারে উঠে যেতে বাংলাদেশ। কিন্তু হলো না! ৩৫.৫ ওভারে ১৫০ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের যুবারা হেরেছেন ৫ রানে। আর এই জয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠা পাকিস্তান শেষ চারে খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অন্য সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।
রান তাড়ার শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। প্রথম ১৫ বলেই দলকে ২৬ রান এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার আশিকুর রহমান ও জিশান আলম। পাকিস্তানি পেসার উবায়েদ শাহর একটু লাফিয়ে ওঠা বলটা জিশানের ব্যাটে চুমু খেয়ে উইকেটকিপার সাদ বেগের গ্লাভসে জমা হতেই ধসের সূচনা। আরেক ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি অবশ্য শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন। ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট হন জিশানের অনুলিপি করেই।পাকিস্তানের উইকেটকিপার সাদের গ্লাভসবন্দী হয়ে ফিরেছেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানও। ২৯ বলে ২০ রান করার পর তিনে নামা ব্যাটসম্যান আরেক পেসার আলী রাজার দুর্দান্ত এক বলে ক্যাচ তুলতে বাধ্য হন। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় যুবা টাইগাররা।
চতুর্থ উইকেটে ৩৩ বলে ২৯ রান যোগ করেন আরিফুল ইসলাম ও আহরার আমিন। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে আহরারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন উবাইদ। ১৬তম ওভারে নাসিম শাহর সহোদর উবায়েদের তৃতীয় শিকার হওয়া আহরার ২৩ বলে করেন ১১ রান। পরের ওভারে রাজার বলে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হন আরিফুল (২০ বলে ১৪)। ৫ বল ও ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ষষ্ঠ উইকেট হারায় ২০তম ওভারে। উবায়েদের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন শেখ পারভেজ। ৮৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে সেমিফাইনালে স্বপ্ন তখন ধূসরপ্রায়। শিহাব জেমসকে নিয়ে সেই স্বপ্নেই এরপর রং লাগানোর কাজ শুরু করেছিলেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। সপ্তম উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন দুজন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করে উবাইদ শাহর পঞ্চম শিকার হন জেমস।
এরপর অধিনায়ক রাব্বি পরের ওভারে রাজার শিকার হলে কার্যত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা। রাজার বলে সাদ বেগের পঞ্চম শিকার হওয়া মাহফুজুর ফিরেছেন ১৩ রানে। পরের ওভারে রানআউট ইকবাল হোসেন।
শেষদিকে বর্ষণের ব্যাট কেবল হতাশাই বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান মারুফ মৃধাকে নিয়ে এরপর রোহনাত দৌল্লাহ বর্ষণ স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ৩৬তম ওভারে মোহাম্মদ জিশান মারুফকে বোল্ড করতেই স্বপ্নের সমাধি। বল হাতদুর্দান্তবোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও দারুণ খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। হার না মানা ২৪ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলেও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।