রোনালদোকে শেষবারে কবে এভাব কাঁদতে দেখেছে বিশ্ব! কবে এভাবে তিনি নত মস্তিষ্কে বিদায় নিয়েছিলেন! সবকিছুর যেন হতাশায় পরিপূর্ণ করে রোনালদোর বিদায় মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছিলে মরক্কো।
বিশ্বকাপে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন রোনালদো। ভেবেছিলেন হয়তো এবার বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারবেন। দলটাও ছিল দারুণ সব প্রতিভাবান ফুটবলারে পরিপূর্ণ। কিন্তু পারলেন না তিনি। পারলো না পর্তুগালও। নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে এসে চোখের জলে বিদায় নিলেন রোনালদো।
মোট ৫টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হয়েছে রোনালদোর। যেখানে ২২টি ম্যাচ খেলে ৮টি গোল করেছেন এই স্ট্রাইকার। কিন্তু পর্তুগালের হয়ে যে আসল কাজ- সেটিই তিনি করতে পারলেন না। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনেছিল পর্তুগিজরা। কিন্তু সবকিছুই যেন মিইয়ে গেলো। আবার কি রোনালদো ফিরবেন বিশ্বকাপে? ২০২৬ বিশ্বকাপে বয়সটা হবে ৪১। এই বয়সে কোনো ফুটবলারই বিশ্বকাপে খেলবেন না। কিন্তু রোনালদো যদি চান তাহলে সবই সম্ভব।
স্পোর্ট্স ডেস্ক ঃ কেমেরা বারবার খুঁজে ফিরছিল রোনালদোর বিষন্ন চেহারাকে। শেষবারের মত বিশ্বকাপে খেলতে এসে দেশকে অধরা এই ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। কিন্তু পারলেন না। আফ্রিকার সিংহ মরক্কোর কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় রোনালদোর পর্তুগাল। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিতে উঠলো মরক্কো।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচ সাইডবেঞ্চে বসে রয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আল থুমামা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী দল পর্তুগাল এবং আফ্রিকান অদম্য সিংহ মরক্কো। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডে পর্তুগালের জালে বল জড়িয়ে দেন মরক্কোর ইউসুফ এন-নেসিরি।
পুরো ম্যাচে স্পষ্ট প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেছে পর্তুগাল। বল দখলের লড়াইয়ে পর্তুগালের ছিল ৬৫ ভাগ এবং মরক্কোর ছিলো কেবল ৩৫ ভাগ। কিন্তু প্রতি আক্রমণে অসাধারণ গোলটি আদায় করে নিয়েছে মরক্কানরা।
বাম পাশ থেকে আতিয়াত-আল্লাহ’র দুর্দান্ত ক্রস লাফ দিয়ে উঠে ধরতে চেয়েছিলেন পর্তুগিজ গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা। কিন্তু তার আগেই দৌড়ে এসে লাফিয়ে উঠে মাথায় বল ছুঁইয়ে দেন সেভিয়া স্ট্রাইকার এন-নেসিরি। বল জড়িয়ে যান পর্তুগালের জালে। এই গোলের আগে আরও দুটি হেড মিস করেছিলেন এন-নেসিরি।
৪৫তম মিনিটেই পর্তুগিজদের দুর্ভাগ্য হয়ে আসে বারে বল লেগে যাওয়া। দালতের ফ্লিক থেকে বল পেয়ে ব্রুনো ফার্নান্দেজ অসাধারণ এক শট নেন ডান প্রান্ত থেকে। কিন্তু বল পর্তুগিজদের উপরের বারে লেগে ফিরে আসে।
বিরতি থেকে ফিরেই কোচ ফার্নান্দো সান্তোস মাঠে নামান রোনালদোকে। মুহুর্মুহু আক্রমণে মরক্কোর ডিফেন্সে ঝড় তোলে পর্তুগিজরা। ৫৯ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে ওতাভিয়ার ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রামোস।
৬৫ মিনিটে আবারো গোলের সুযোগ পায় পর্তুগাল। কিন্তু ব্রুনো ফার্নান্দেজের দুর্দান্ত শট গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। হতাশায় মুষড়ে পড়েন ব্রুনো।
৮৩ মিনিটে মরক্কোকে নিশ্চিত গোল খাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন মরক্কোর গোলরক্ষক আগের ম্যাচের নাত্যক বুনু। ডি বক্সের সামান্য ভেতরে থেকে হোয়াও ফেলিক্স বা পায়ের দুর্দান্ত বাকানো শট নিলে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন বুনু।
৯০ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর থেকে রোনালদোর ডান পায়ের জোড়ালো শট রুখে দেন বুনু। ৯২ মিনিটে মরক্কোর চেদিরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আফ্রিকান দলটি।
৯৫ মিনিটে গোলের সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন মরক্কোর আবুখলিল। পর্তুগিজ গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল দিতে পারেননি তিনি। ৯৭ মিনিটে পেপের দুর্দান্ত হেড গোলবার ঘেষে চলে গেলে গোলবঞ্চিত হয় পর্তুগাল।
ম্যাচের একদম শেষ দিকে আরো দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও গোল দিতে পারেনি পর্তুগাল৷ ফলে বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই বিদায় নিল পর্তুগাল। আর ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো মরক্কো।