ব্রিটেনে নতুন শর্তের আয়সীমার ফাঁদে 'স্পাউস (স্ত্রী বা স্বামী) ভিসা' সংসার ভাঙার শঙ্কা

ব্রিটেনে নতুন শর্তের আয়সীমার ফাঁদে ‘স্পাউস (স্ত্রী বা স্বামী) ভিসা’ সংসার ভাঙার শঙ্কা

জুমাস ডেস্ক: “২০২৪ সাল থেকে বাংলাদেশসহ ব্রিটেনের বাইরে থেকে স্বামী বা স্ত্রী আনার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নূন্যতম আয় বছরে হতে হবে ৩৮ হাজার ৭০০ ব্রিটিশ পাউন্ড। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।” বাংলাদেশি কমিউনিটির আইনজীবীরা বর্তমানে ১৮ হাজার ৬০০-এর স্থানে একলাফে দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর সরকারি এমন সিদ্ধান্তকে নাগরিকদের পারিবারিক জীবনের জন্য হুমকি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বা দীর্ঘমেয়াদে বসবাসের অনুমতি (ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন) থাকলে স্ত্রী-সন্তান ভিন্ন দেশের নাগরিক হলে তাদের আনার জন্য যে ভিসা রয়েছে তা স্পাউস বা সেটেলমেন্ট ভিসা হিসেবে পরিচিত। ব্রিটেনের বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্য যে কোনও দেশ থেকে স্ত্রী বা স্বামী আনার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর ক্ষেত্রে নতুন আয়সীমার শর্ত প্রযোজ্য হবে। সন্তান থাকলে প্রতি সন্তানপ্রতি এই আয়সীমার উপরে বাড়তি শর্ত যুক্ত হতে পারে। কারণ বর্তমান নিয়মেও প্রতি সন্তানের জন্য বাড়তি আয় সীমার শর্ত রয়েছে। উল্লেখ্য,সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে যে, ব্রিটেনে জাতিগত সংখ্যালঘু কমিউনিটি হিসেবে বাংলাদেশিদের গড় আয় শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের চেয়ে অনেক কম। অভিবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ২৫ হাজারের বেশি পাউন্ড উপার্জনকারী মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। বাংলাদেশিসহ অভিবাসী কমিউনিটিতে হাজার হাজার মানুষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন এ অমানবিক শর্তের বেড়াজালে প্রভাবিত হবে বলে মনে করছেন কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শুধু স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে এ আয়সীমা হলেও দম্পতির দুই সন্তান থাকলে শর্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজার পাউন্ড ছুঁতে পারে। অনেকে যারা বাংলাদেশসহ ব্রিটেনের বাইরে ইতোমধ্যে বিয়ে করেছেন কিন্তু স্পাউস আনার আবেদন করতে পারেননি তারা আছেন দুর্ভাবনায়। নতুন শর্তের কারণে তারা ব্রিটেনে এসে একসঙ্গে সংসার করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা নাজিম আহমদ চৌধুরী বলেন, মূলত যারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বড় হয়ে এখানে আসেন তাদের মধ্যেই নিজ নিজ দেশে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা থাকে। যারা অন্য দেশ থেকে বড় হয়ে ব্রিটেনে আসেন, তাদের ব্রিটেনে লেখাপড়ার সুযোগ থাকে না। ফলে সঙ্গত কারণেই প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের ৩৮ হাজার পাউন্ড আয় করার মতো কাজ থাকে না। আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রিটেনে জন্ম ও বড় হওয়া ছেলে-মেয়েরা অন্য দেশে জন্ম ও বড় হওয়া পাত্র-পাত্রীকে বিয়ে করতে অনাগ্রহী। নতুন আইনের কারণে অনেক একাকী জীবন-যাপন করতে হবে, যা নিতান্তই অমানবিক। লন্ডনের ক্রয়োডন কাউন্সিলের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, এদেশে নতুন পাসকরা একজন ডাক্তারের বেতন বছরে চব্বিশ-পঁচিশ হাজার পাউন্ড। দেশজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে এ অমানবিক শর্তারোপ মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, এ আইনটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হলে আদালত বিষয়টির বাস্তবতা অনুধাবন করবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে কনজারভেটিভ সরকার শ্বেতাঙ্গ ভোট ব্যাংক ধরে রাখার আশায় এসব নতুন শর্ত আরোপ করছে। ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির খ্যাতিমান ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন ও ব্যারিস্টার শুভাগত দেব বলেছেন, খোদ ব্রিটেনে জন্ম ও বড় হওয়া অনেকের পক্ষেও এই ন্যূনতম আয়সীমার শর্ত পূরণ অসম্ভব। শর্ত দিয়ে কারও জীবনসঙ্গী নির্ধারণের বিষয়টি অমানবিক। আমরা আশা করছি বিষয়টি পর্যালোচনা হবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *